কীভাবে স্পেসএক্স চিরতরে বদলে দিয়েছে মহাকাশ শিল্পকে!

দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশ অন্বেষণ ছিল কেবলমাত্র সরকারি সংস্থাগুলোর দখলে—NASA, Roscosmos, ESA-এর মতো সংস্থাগুলোই পরিচালনা করত উপগ্রহ উৎক্ষেপণ, মহাকাশচারীদের পাঠানো এবং চন্দ্রজয়ের মতো বড় মিশন। তবে ২১শতকে এক বিশাল পরিবর্তন এনেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান—SpaceX

২০০২ সালে এলন মাস্কের হাত ধরে যাত্রা শুরু করা SpaceX এখন কেবল একটি রকেট কোম্পানি নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে আধুনিক মহাকাশ শিল্পের নেতৃত্বদাতা। পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তি, ISS (International Space Station) এ নিয়মিত মিশন, এবং ভবিষ্যতের মঙ্গল অভিযানের জন্য প্রস্তুতি—এই সবকিছুতেই SpaceX রেখেছে বৈপ্লবিক ছাপ।

এই আর্টিকেলে আমরা জানব কীভাবে SpaceX মহাকাশ ভ্রমণকে সহজ, সাশ্রয়ী এবং বৈশ্বিক করেছে। একই সঙ্গে স্পেসএক্স স্টক (spacex stock), স্পেসএক্স লঞ্চ (spacex launch), এবং ISS এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

শুরুর দিনগুলো: অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা

SpaceX-এর জন্ম হয় এক স্বপ্নকে কেন্দ্র করে—মানবসভ্যতাকে বহুগ্রহবাসী করা। এলন মাস্ক তার নিজের ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে কোম্পানিটি শুরু করেন। প্রথম রকেট Falcon 1 তিনবার উৎক্ষেপণে ব্যর্থ হয়, কিন্তু চতুর্থবারে ২০০৮ সালে সফল হয়।

এই সফলতার পর NASA থেকে SpaceX পায় একটি বড় চুক্তি—১.৬ বিলিয়ন ডলারে ISS-এ কার্গো পাঠানোর দায়িত্ব। এটাই ছিল তাদের টিকে থাকার প্রধান উৎস।

পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট: মহাকাশ ভ্রমণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

পূর্বে প্রতিটি রকেট ছিল একবার ব্যবহারযোগ্য—প্রতি উৎক্ষেপণে কোটি কোটি ডলার খরচ হতো। SpaceX এই প্রথা ভেঙে পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরির পথে হাঁটে।

২০১৫ সালে প্রথম সফলভাবে Falcon 9 রকেটের প্রথম ধাপ পৃথিবীতে নামানো হয়। এরপর থেকে বহুবার এই প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে। কিছু রকেট তো ১৫ বারেরও বেশি ব্যবহার হয়েছে।

এই প্রযুক্তির ফলে এখন একটি spacex launch-এর খরচ ৭০ মিলিয়ন ডলারের নিচে, যা ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির চেয়ে অনেক কম।

NASA ও ISS-এর সঙ্গে যুগান্তকারী সহযোগিতা

SpaceX কেবল মালামাল পাঠিয়েই থেমে যায়নি। ২০২০ সালের মে মাসে তারা ইতিহাস গড়ে Crew Dragon Demo-2 মিশনের মাধ্যমে দুই NASA মহাকাশচারীকে ISS-এ পাঠায়।

এই প্রথমবার কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানুষকে মহাকাশে পাঠায় এবং নিরাপদে ফেরত আনে। এরপর থেকে SpaceX NASA-এর নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে নিয়মিত ISS-এ মিশন পরিচালনা করছে।

Crew Dragon ক্যাপসুলটি স্বয়ংক্রিয়, একসঙ্গে সাতজন যাত্রী বহন করতে পারে এবং নিজে নিজেই ISS-এ ডক করতে সক্ষম।

Starlink: মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট

SpaceX এর আরেকটি বিপ্লবী প্রকল্প হচ্ছে Starlink। এটি একটি স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক যা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় উচ্চগতির ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে পারে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০০ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

Starlink কেবল প্রযুক্তির দিক থেকেই নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ধারণা করছেন যে ভবিষ্যতে Starlink আলাদা কোম্পানি হিসেবে IPO (Initial Public Offering) করতে পারে। এ কারণে spacex stock নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েই চলেছে।

Starlink ইতিমধ্যেই বহু দেশে পরিষেবা শুরু করেছে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি ও দুর্যোগকালীন সময়েও গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ সরবরাহে ব্যবহৃত হয়েছে।

বেসরকারি মহাকাশ ভ্রমণ: Inspiration 4 এবং তারপর

SpaceX ২০২১ সালে Inspiration 4 মিশনের মাধ্যমে ইতিহাস গড়ে—এটি ছিল প্রথম সম্পূর্ণ বেসরকারি ক্রু নিয়ে মহাকাশ ভ্রমণ। যাত্রীরা তিন দিন পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করেন।

এরপর আরও কয়েকটি প্রাইভেট মিশন পরিচালনা করা হয়েছে, যেগুলো Axiom Space-এর মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এমনকি ভবিষ্যতে বেসরকারি সংস্থা ও পর্যটকদের ISS-এ পাঠানোর পরিকল্পনাও চলছে।

SpaceX-এর এই অগ্রগতি অন্যান্য কোম্পানিকে উৎসাহিত করেছে—Blue Origin, Rocket Lab, Relativity Space-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও মহাকাশ শিল্পে প্রবেশ করেছে।

Starship: চাঁদ, মঙ্গল এবং তারও পর

SpaceX-এর সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প হলো Starship। এটি একটি সম্পূর্ণ পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট যা একাধিক টন মালামাল বহনে সক্ষম। চাঁদের মিশন, মঙ্গল অভিযানে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই এর ডিজাইন।

NASA ইতিমধ্যে Starship-কে তাদের Artemis চন্দ্র মিশনের জন্য ল্যান্ডার হিসেবে বেছে নিয়েছে। Starship সফল হলে মহাকাশে যাওয়ার খরচ দশগুণেরও বেশি কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

SpaceX টেক্সাসের Starbase-এ এই রকেটের পরীক্ষা চালাচ্ছে। এটি সফল হলে চাঁদের পর মঙ্গল গ্রহ হবে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য।

স্পেসএক্স স্টক (SpaceX Stock): বাজারের আগ্রহ

যদিও spacex stock এখনও পাবলিক মার্কেটে লিস্টেড হয়নি, এটি বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে অত্যন্ত আলোচিত বিষয়। কোম্পানিটির মূল্য বর্তমানে $১৮০ বিলিয়ন-এরও বেশি বলে ধারণা করা হয়।

Starlink যদি ভবিষ্যতে আলাদা হয়ে শেয়ার বাজারে আসে, তাহলে সেটি বিশ্বের অন্যতম বড় প্রযুক্তি কোম্পানিতে পরিণত হতে পারে। এলন মাস্ক জানিয়েছেন, তারা স্পেসএক্স পাবলিক করবেন না যতক্ষণ না মঙ্গল অভিযানের দিকে বাস্তব অগ্রগতি ঘটে।

তবে এখনই বিশাল অঙ্কে বিনিয়োগ আসছে প্রাইভেট ফান্ড এবং প্রতিষ্ঠান থেকে। ভবিষ্যতে স্পেসএক্স স্টক নিয়ে বাজারে বিশাল আলোড়নের সম্ভাবনা রয়েছে।

উপসংহার

SpaceX আমাদের মহাকাশের সাথে সম্পর্কই পাল্টে দিয়েছে। ISS-এ মানুষ পাঠানো থেকে শুরু করে মঙ্গলগ্রহে পৌঁছানোর প্রস্তুতি—সবখানে SpaceX রেখেছে অগ্রণী ভূমিকা।

মহাকাশ এখন শুধু বিজ্ঞানীদের নয়, সাধারণ মানুষের কাছেও অনেক বেশি বাস্তব। আপনি যদি এখনই কোনো spacex launch লাইভ দেখেন, Starlink ব্যবহার করেন, অথবা spacex stock নিয়ে আগ্রহী হন—আপনি একটি নতুন মহাকাশ যুগের সাক্ষী।

আর এই যাত্রার সবে তো মাত্র শুরু!

Follow us!

Related Posts

Space_1690418913
Scroll to Top